ভালোবাসার সাতকাহন (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-১৮)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ০৫ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:০২:৫৫ সন্ধ্যা
অন্তরকে স্কুল থেকে নিয়ে এইমাত্র বাসায় ফিরেছে বিথী।
আসার পথে অন্তর অনেক দুষ্টুমি করেছে আজ। প্রতিদিনই করে। একটু শক্ত হয়ে শাসন করার কথা চিন্তা করলেও ছেলের মুখের দিকে তাকালে সব রাগ পানি হয়ে যায় বিথীর।
মায়া... ভালোবাসা... মায়ের স্নেহ এসব কিছুকে ছাপিয়ে ওর মাঝে কেমন নিজেকে পাবার অনুভূতি... একধরণের অধিকার সমস্ত হৃদয় জুড়ে বিস্তৃত হতে থাকে।
স্কুল থেকে এসে অন্তর নিজের রুমে চলে যায়। খুব গোছালো স্বভাবের হয়েছে। একেবারে শাহেদের মত। বিথী যদিও টিপটপ থাকতে ভালোবাসে, তবে শাহেদের মত অতটা নয়। অন্তর ওর রুমের নিজস্ব জিনিসগুলোতে অন্য কারো ছোঁয়া একদম পছন্দ করে না। এইটুকু বয়সে নিজের বিছানা, পড়ার টেবিল সহ রুমের অন্যান্য খেলনা সামগ্রী সে নিজেই ইচ্ছেমত মনের ভালো লাগা অনুযায়ী সেট করিয়েছে। যে জিনিস যেখানে রেখেছে, সেটা সেখানে না পেলেই সে বুঝে যায় ওর রুমে অন্যের অনুপ্রবেশ। আর এই অনুপ্রবেশ কেবল মাত্র দুজনের দ্বারাই ঘটে থাকে। ছুটা কাজের বুয়া এবং বিথী।
অন্তরের রুমে কাজের বুয়ার প্রবেশের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে সে বাবা মাকে। তাই অন্তর স্কুলে থাকার সময়টিতে ওর রুমে যা কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালাতে হয় বুয়াকে। তবে স্কুল থেকে ফিরে এসে কিছু না কিছু অসামঞ্জস্য সে ঠিকই টের পায়। পেন্সিল বক্সটি পড়ার টেবিলের পশ্চিম পাশে উল্টো করে রেখে গিয়েছিল সে। স্কুল থেকে এসে সেটাকে সঠিক দিকে পুর্ব পাশে দেখতে পায়... ফ্রিশবি টা বিছানার পায়ের দিকের মেঝেতে ইচ্ছে করে ফেলে গিয়েছিল... ওটাও দেয়ালে ব্যাডমিন্টনের পাশে স্থান পেয়েছে... এরকম টুকিটাকি কিছু না কিছু খুঁত অন্তর বাসায় এসে বের করবেই।
তবে এটা নিয়ে অন্য বাচ্চাদের মত চিৎকার করে না সে। গালও ফুলিয়ে থাকে না। শুধুমাত্র বন্ধের দিনে খাবার টেবিলে বাবা-মা সহ বুয়াকে ডেকে দিন তারিখ উল্লেখ করে এই অসামঞ্জস্যগুলো তুলে ধরে। ঠান্ডা স্বরে জিজ্ঞেস করে, ‘ তুমি আবারো আমার রুমে ঢুকেছিলে কেন?’
ফ্রেশ হয়ে বিথী নিজের রুমে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয়।
বড্ড ক্লান্ত লাগছে আজ। মনটাও কেন জানি বিমর্ষ হয়ে আছে। শরীরের ক্লান্তি, সে তো একটু বিশ্রাম নিলেই ক্লান্তিকে ঝেড়ে ফেলে ঝরঝরে করে তোলা যায়। কিন্তু মন? মনের বিমর্ষতা কি এতো সহজে ঝেড়ে ফেলা যায়? কিংবা সতেজতাকে ফিরিয়ে আনা?
আজ অন্তরকে স্কুল ছুটির পর আনতে গিয়ে, বন্ধু-বান্ধব বেষ্টিত হাস্যোজ্জল অন্তরকে খুব প্রানোচ্ছল দেখাচ্ছিল। ওদের নিজস্ব শরীরী ভাষায় ওরা আলাপ করছিল। অনাহুতের মত বিথী সেখানে ঢুকে পড়ে। কি একটা কার্টুন চরিত্র নিয়ে কথা হচ্ছিল। অন্তর বন্ধুদের একজনকে সেই চরিত্রের নামে ডাকছিল। সেও পাল্টা অন্তরকে সেই নামে ডাকে। ফস করে বিথী বলে বসে,’ অগি কে, বাবা?’
মুহুর্তে কচিকাঁচাদের ভীড়টা একটু থমকে যায়। অন্তরের এক বন্ধু বিথীকে লক্ষ্য করে বলে, ‘আন্ট, তুমি অগিকে চিনো না?!!’ যেন অগি নামের কার্টুন চরিত্রটিকে না চেনাটা বিরাট কোনো ভুল হয়েছে। এরপর সমবেত অন্য শিশুরা এক সাথে হাসতে থাকে। বিথীর অজ্ঞতায় ওরা খুব মজা পায়... অন্তরের হৃদয়ের কোথায় যেন একটা তার ছিড়ে গেল। বিথী ওর মুখ দেখেই সেটা অনুভব করে।
মায়ের সাথে গাড়িতে পাশাপাশি বসে থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে অন্তর মাকে বলে, ‘ আম্মু, তুমি কেন কথা বলতে গেলে? আর কোনো দিন আমার বন্ধুদের সাথে এরকম কথা বলো না। ওরা কিভাবে হাসছিল দেখেছ? এরপর থেকে আমাকে ডাকবে, আমি চলে আসবো ছুটির পরে তোমার কাছে।’
মুহুর্তে নিজের অস্তিত্বের ভিতর থেকে এই প্রথম একটু দূরে সরে আসার যাতনা অনুভব করে যেন বিথী! নিজের হৃদয়ের ভিতরে ধারালো কিছু একটা দিয়ে সুক্ষ্ণভাবে একটি বিভক্তি রেখা স্বরূপ একটি করিডোরের অস্তিত্ব টের পায়।
নিজের বিছানায় বসে ভাবনার ধোঁয়াটে নীল জগৎটাতে ঢুকে গিয়ে বেশ অতীতে হারায় বিথী। ডানাহীন এক প্রজাপতির মত অসহ্য অলস গতিতে পায়ে পায়ে কিছু বিবর্ণ মলিন ছবিকে মস্তিষ্কের ঝিল্লীতে অনুভব করে...
ওদের দুজনের জীবনের শুরুর সময়টা...বিথী শাহেদের বউ। ভালো মেয়ে। শ্বশুর শাশুড়ির আদরের। এই আদরটুকু শাহেদের জন্য একটু বেশি প্রাপ্তি। বড় ভাই বউ নিয়ে চলে যাবার পর হওয়া গভীর ক্ষতটায় এটা ওষুধ। নিরাময়। শান্তি।
দিনগুলো বেশ কেটে যাচ্ছে উত্তরার এই ফ্ল্যাটটিতে। তখন শাহেদের বাবা মা ও একসাথে ওদের সঙ্গেই থাকেন। দু’তিন মাস পর পর রাশেদুল করীম সাহেব গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দিন পনের থেকে আসেন। সব দিকই সামলানো যাচ্ছিল এভাবে।
কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলায় প্রথম ছন্দপতন ঘটে তিনপুরুষের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের ভিতরকার ব্যবধানের কারনে। যদিও ব্যবধান আপাত দৃষ্টিতে তেমন কিছুই ছিল না, শুধুমাত্র একে অপরকে একটু মানিয়ে নিলেই হতো।
অন্তরের প্রথম জন্মদিনটা বেশ ঘটা করেই করতে চাইলো বিথী। আশেপাশের ফ্ল্যাটের পরিচিত সবাইকে এবং শাহেদের অফিসের কলিগদেরকেও দাওয়াত দেয়া হল। সবাই যার যার সন্তানদেরকে সাথে নিয়ে এলেন। কেক কাটার পরে খাওয়া দাওয়ার সময়ে আয়েশা বেগম উপস্থিত মহিলা গেষ্টদের সাথে আলাপ করছিলেন। তিনি তার আজীবন লালিত সংষ্কারের ভিতর দিয়েই নিজের এলাকার ভাষায় কথা বলছিলেন। তার কথা শুনে এবং আঞ্চলিক টোনের কারনে মহিলাদের সাথে থাকা ছেলেমেয়েরা মজা পায়... ওরা হাসাহাসি করে। হাসি সংক্রামক... ধীরে ধীরে তথাকথিত হাই সোসাইটির দাবীদার পরিবারের কর্ত্রী রূপী বিথীর পড়শীরাও একটু অবজ্ঞার সুরে নিজেদের ভাড়ামি প্রকাশ করে ফেলে। একজন বৃদ্ধা মায়ের স্নেহের আতিশয্য আঞ্চলিকতার দেয়ালে ঠোকর খেয়ে বার বার ফিরে আসে।
বিথী পাশেই ছিল। সে এটা ওভারলুক করলেই পারত। কিন্তু উপস্থিত গেস্টদের সামনে যেন ওর নাক কাঁটা গেলো। কিছু একটা উছিলা করে আয়েশা বেগমকে নিয়ে অন্যত্র চলে আসে সে। সকলের থেকে আলাদা হয়ে নিজের মায়ের মতন শাশুড়িকে বলে, ‘ আম্মা, কি দরকার ছিল ওখানে কথা বলার? কোথায় কিভাবে কথা বলতে হবে, সেটা যদি না বোঝেন, তবে চুপ করে থাকলেই তো পারেন। আর কোনো দিন এরকম ভাবে কথা বলতে আসবেন না। দেখছিলেন, সবাই কিভাবে হাসছিল?’
এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি!
একজন মাকে সেদিনের বিথীর বলা কথাগুলোই যেন আজ অন্তরের মুখ দিয়ে বের হল... কিছু তীর্যক কথা সময়ের গন্ডীতে ঘুরপাক খেয়ে সেই সময়ের এক মায়ের হৃদয় বিদীর্ণ করা কষ্টকে সাথে নিয়ে আজ এক সন্তানের মুখ দিয়ে বের হয়ে বিথী নামের এক মায়ের হৃদয়কে ব্যথাতুর করে তোলে! সেদিন বিথীও তো সকলের সাথে হেসে উড়িয়ে দিয়ে পরিবেশটাকে হাল্কা করে দিতে পারত? কিন্তু সে তা না করে, আয়েশা বেগমকে কিছু কথা শুনিয়ে দিয়েছিল। বিথীর কাছের সম্পর্কগুলোর সাথে সেই-ই প্রথম ছন্দপতন ঘটে। সে নিজের বাবা মায়ের কথাও ভুলে গিয়েছিল। যারা চট্টগ্রামের বাসিন্দা এবং নিজেরাও কথা বলার সময়ে আঞ্চলিকতার টোনকে লুকাতে পারেন না।
আয়নায় নিজেকে দেখে বিথী।
নিজের প্রতিচ্ছবিকে জিজ্ঞেস করে, ‘ কি? জ্বালা করছে নাকি তোমার হৃদয়ে? আজ কেন কষ্ট পাচ্ছ? কষ্টের তীব্রতা কি , সেটা আজ নিজের সন্তানের কথায় অনুধাবন করতে পেরেই কি তোমার এই বিমর্ষতা?’
আর একদিন অন্তরের রুম গোছাতে গিয়ে বিথী অন্তরের নিজস্ব কি যেন একটা সেটিং নষ্ট করে দিয়েছিল। যা অন্তরের পছন্দ হল না। সে রাগ হয়ে মাকে বলে, ' তুমি আর আমার রুমে এসো নাতো, সব জিনিস কেন ধরাধরি কর?
এই একই কথার রেশ ধরে বিথী আবারো অতীতে ফিরে যায়...
একসাথে থাকার সেই সময়টায়। সকালে ছুটা বুয়া আসে আটটায়। বীথি ঘুমুচোখে দরজা খোলে আবার দশ মিনিট শোয়। ইতোমধ্যে বুয়া টেবিলে খাবার দেয়।
সবাই ঠিক একইসাথে বসতে না পারলেও নয়টার আগে নাশতা পর্ব শেষ হয়। বুয়াটা ক্লোজ ডোর বাসের মত সাঁইসাঁই আধা খেঁচড়া গোঁজামিলে দুই ঘন্টায় হিসাবের গোনা গুনতি কাজ করে দিয়ে অন্য তিন বাড়ির কাজে দৌড় দেয়। এক এক দিন দরজা খোলা রেখেই চলে যায়।
এই রকমই একদিন দরজা খোলা দেখে বীথির মেজাজ চড়ে যায়। শাশুড়ি চিন্তিত হন। ঢাকায় ফ্ল্যাটবাড়িতে থাকা তার এমনিতেই ভয় লাগে। অচেনা মানুষে ভরা। কার মনে কী - কে জানে। তিনি বউকে বললেন, ' বউ, শহরে পানি ঘরের ভিতর। চুলায় কষ্ট নাই। কাজগুলি তুমি আর আমি করি। বুয়া তো কতই আসল গেল। সব এক। দোড়াইয়া ঢুকে - উল্টাইয়া পাল্টাইয়া থুইয়া চইলা যায়। কি করে? কিছু কইলেও খুন্তির ছ্যাকা দেওনের মত জবাব দেয়। '
বীথি হঠাৎ বলে বসল,' আম্মা, সব নিয়ে কথা না বলা ভাল। আপনাকে খাটানো আমার সম্ভব না। আর, বুয়া খ্যাচখ্যাচ তো করবেই। পানটা তো চাইলে পিক না ফেলে খাওয়া যায়। কিছু কাজ বদলানো যায়। ওরা দশ ঘরে যায়। তাড়াহুড়া করবে, মেজাজ করবে ।'
বউয়ের সামনে অপরাধী হয়ে আয়েশা বেগম মাথা নিচু করে ফেলেন। তিনি জানেন, বেসিনে পানের পিক ফেল... খাবার টেবিলে শহুরে কায়দা কানুন না জানা... সোসাইটির অন্য মহিলাদের সামনে নিজের স্বতস্ফুর্ত গ্রাম্য চালচলনের উপর বিরক্ত বীথি। তারপরও নিজের মেয়ের মত বউমার কথায় রাগ হয়না। ছেলে শাহেদের মুখ...সুখ সব কিছুই এক ঝটকায় হৃদয়ে এক সাগর ভালোবাসা দিয়ে আয়েশা বেগমের হৃদয়কে কানায় কানায় ভরিয়ে দেয়।
এরপরও তিনি ঘরের টুকটাক কাজ নিজেই উদ্যোগী হয়ে করেন। বউমা বিরক্ত হলেও কিছু বলে না। কাজের বুয়া খুশী হয়। তার কাজ অনেক কমে যায়।
একদিন বিথীর রুম গোছাতে গিয়ে বেডসাইড টেবিলে রাখা বিথী-শাহেদের বিয়ের প্রথম দিকের একটি ফটোস্ট্যাণ্ড বেখেয়ালে হাতের ধাক্কায় পড়ে ভেঙ্গে যায়। এই ফটোস্ট্যান্ডটি শাহেদ বিথীর জন্য গিফট দিয়েছিল বিয়ের পরে ওর প্রথম জন্মদিনে। তাই এটি খুবই স্পর্শকাতর স্মৃতিময় একটি এন্টিক্সের মত ছিল বিথীর কাছে।
সব জেনে প্রথমটায় খুব কষ্ট পায় বিথী। এরপর ধীরে ধীরে কষ্টের যায়গা ক্রোধ দখল করে। সোজা সাপ্টা শ্বাশুড়িকে বিথী বলে, ‘ আপনাকে আমার বেডরুমে কে আসতে বলেছে? সব জিনিস কেন ধরাধরি করেন? আর আমার রুমে ঢুকবেন না আপনি।‘
সেই একই কথা! একই ভাবেই অপরপক্ষের বুক ভরা ক্রোধের সাথে বের হয়ে আসে। যেভাবে সেদিন বিথীর মুখ দিয়ে বের হয়েছিল।
উঠে বসে বিথী।
ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। গ্লাসে পানি ঢেলে পিপাসা মেটাতে চায়। কিন্তু আজ কোনোভাবেই কিছুই মিটবার নয় যেন। আজকের দিনটি কেমন এলোমেলো হয়েই শুরু হয়েছে। শেষও কি এভাবেই হবে? অন্তরের রুমের দিকে হেঁটে যেতে যেতে বিথী অনুভব করে- যে কোনো কিছুর শুরুটা যেভাবে হবে, শেষটাও তো সেভাবেই হওয়া উচিত।
সে নিজের পারিবারিক জীবনকে এলোমেলো করেছে নিজেই... তাই তার শেষটাও সে কিভাবে গোছালো হবার আশা করে?
নিজের বিছানায় বালিশে পিঠ এলিয়ে ভিডিও গেমস নিয়ে মগ্ন অন্তর! কতটা মায়াময় চেহারা! হৃদয়কে কেমন মথিত করে দেয়। আর এই প্রিয় সন্তান যদি দূরে সরিয়ে দিতে চায় ওকে, কেমন লাগবে?
নীরবে ছেলের রুম থেকে ফিরে আসে বিথী।
নিজের ভুলগুলোকে অনুধাবন করে শোধরানোর মানসিকতা নিয়ে নিজের কাছেও ফিরে আসে। নিজেদের কাছের মানুষগুলোকে নিছক সামাজিক স্ট্যাটাস বজায় রাখার জন্য কেন দূরে সরিয়ে দেয়া? তাদের সামান্য অপুর্ণতাকে ভালোবাসায় মেখে নিয়ে মায়ার দৃষ্টি দিয়ে দেখবার চোখ অর্জন করাটা কি এতোই কঠিন?
নিজের বেডরুমের সাথের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় ।
অনেক নিচে মানুষ... সমাজ... শহর... রাজধানী... সব মুহুর্তের জন্য ওর কাছে বিস্মৃত হয়। শুধু নিজেকে নিয়ে ভেবে ভেবে আজ বিথী এতটা উপরে উঠে নিজেকে বড্ড নিঃসঙ্গ অনুভব করছে। ওর কাছের মানুষেরা ক্রমে অনেক দূরে সরে গেছে। তবে কি লাভ এরকম উপরে ওঠায়?
সে ভাবে... আমরা নিজেদের চেতনায় পুর্বপুরুষদেরকে অসহায় করে ঠেলে দূরে সরিয়ে যে শূন্যতার সৃষ্টি করছি, ভাবনার মায়াজালে যে সৌখিন বৃদ্ধাশ্রমের উৎপত্তি নিজেরাই ঘটাচ্ছি- সেখানে হয়তো আমাদের বাবা-মায়েরা কোনো না কোনোভাবে সময় পার করেই দিবেন। কিন্তু আমাদের উত্তরপুরুষের সতর্ক দৃষ্টির সামনে নিজেদের পুর্বপুরুষদের জন্য যা করছি, তাঁরা সেগুলো দেখছে... অনুধাবন করছে... এবং সঠিক সময়টিতে সেগুলো আমাদের উপরে ইমপ্লীমেন্ট করবে যে তাতে কোনোই সন্দেহ নাই।
বিথী ভাবে সে ভুল করেছে।
কিন্তু ফিরে আসার সময় এখনো শেষ হয়ে যায় নাই।
হয়ত সম্পর্কের গোঁড়ায় কিছু মরিচা ধরেছে, তবে ওর হৃদয়ের প্রকৃত ভালবাসার রেত দিয়ে সে সেই মরিচা তুলে ফেলতে পারবে।
হ্যা, ওকে পারতেই হবে।
সামনের দিকে তাকায় বিথী... দৃষ্টি দূরে...দিগন্ত যেখানে আকাশকে সাথে নিয়ে মিশে গেছে, তারও ওপারে... শত শত মাইল দূরের একজোড়া বৃদ্ধ-বৃদ্ধার হৃদয়ের আকুতি যেন সে স্পষ্ট শুনতে পেল এখান থেকেই! তাদের হৃদয়ের ভালোবাসা মেঘ হয়ে উড়ে উড়ে উত্তরার এই ফ্ল্যাটটিকে ছায়া দিতে চলে এসেছে... শাহেদ-বিথীর পরিবারটিকে আগলে রাখতে চাইছে সকল দুঃখ-কষ্ট আর নাগরিক জীবনের সীমাহীন উত্তাপ থেকে।
যেভাবেই হোক, এবার ওনাদের দুজনকে এখানে নিয়ে আসবেই সে। হাতে পায়ে ধরে, নিজের পুর্বের সকল অপরাধ মাফ করিয়ে এক সাথে থাকার জন্য মানানোর চেষ্টা করবে। শাহেদ যে ভিতরে ভিতরে বাবা- মা ছাড়া জীবন যাপন করে নিরন্তর কষ্টকে চাপিয়ে রাখছে, তা থেকে এবার নিশ্চয়ই বিথী শাহেদকে মুক্তি দেবার চেষ্টা করবে।
একটি শুভ চিন্তা যে হৃদয়কে ভারমুক্ত করতে কতটা মোক্ষম অস্ত্র হতে পারে, উত্তরার এক ফ্ল্যাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একজন বিথী অনুভব করে।
(ক্রমশঃ)
বিষয়: সাহিত্য
১২৫২ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই অনুভব যদি একটু আগে বোঝা যেত!
সাথে থেকে অনুভুতি রেখে গেলেন, অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
একজন বিথী নয়, এ ভাবনা আর দর্শন ছড়িয়ে পড়ুক সবার মননে। ভালো লাগ্লো, এই পর্বটি। পরের পর্বের প্রতীক্ষায়...
সুন্দর অনুভুতি রেখে গেলেন, অনেক ধন্যবাদ।
ইনশা আল্লাহ, আর দুটি পর্বেই এই গল্প শেষ করে দেবার ইচ্ছেতা রয়েছে।
শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
অন্তরের বিমর্ষতা কে সহজে মুছে ফেলা যায় না!যেন রয়ে রয়েই যায়!একটা ভার ভার কঠিনতা জীবন কে আচ্ছন্ন করে! তবে শুভ চিন্তায় হ্রদয় কে ভারমুক্ত করতে কতটা মোক্ষম অস্ত্র হতে পারে একজন বিথির অনুভবে আমরা তা উপলব্ধি করতে পারি!
এই ভাবনা আর উপলব্ধি বিস্তৃত হোক সবার মাঝে-এই ই কামনা!
অনেক অনেক ভাল থাকবেন শ্রদ্ধেয় মামুন ভাই........
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন ভাই। আপনাকেও আল্লাহ পাক অনেক ভালো রাখুন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
বড় মনের মানুষের প্রকৃত মহান বড়ত্ব তাদের সহজাত বিষয়ই যেন!কথায়-আচরণে-ব্যবহারে-চিন্তায়-মননে-অনুভূবে নিজেদের অজান্তেই মহান বড়ত্বের সুবাস ছড়িয়ে যান তাঁরা চারিদিকে!
মানুষ তাঁদের কে একান্তই আপন ভাবতে বাধ্য হয়!
আপনারাও তেমনই মহান বড়! করুণাময় আল্লাহ যেন আপনাদের থেকে কিছুটাও শেখার তৌফিক দেন-তাই চাই!!
جزاكم الله تعالى حيرالجزاء فى الدنيا و الأحرة......
আপনার জন্য রইলো শুভকামনা। আল্লাহপাক আপনাকেও দীর্ঘায়ু দান করুন-আমীন। আপনার দোয়ায়ও আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ধন্যবাদ মামুন ভাই
সুন্দর কথা বলেছেন। সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
বারাকাল্লাহু ফীহ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন